গ্রামে খুব লাভজনক একটি ব্যবসা

গ্রামে খুব লাভজনক একটি ব্যবসা


Posted on: 2021-04-09 19:15:59 | Posted by: eibbuy.com
গ্রামে খুব লাভজনক একটি ব্যবসা

আজ আমরা আপনাদের সাথে খুবই  লাভজনক এবং সম্ভাবনাময় ব্যবসার আইডিয়া শেয়ার করব। আপনি খুব সহজেই এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এবং এ ব্যবসা গ্রামেই বেশি সুবিধাজনক হবে। আর এ ব্যবসাটি হল গ্রামে সোলার প্যানেলের ব্যবসা।
সোলার প্যানেল নিয়ে দুধরনের ব্যবসা আপনি করতে পারবেন। আমরা সেই দুটি ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আজকে আলোচনা করব।


সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎকে সৌর বিদ্যুৎ বলে। আমরা জানি সূর্যের আলো একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় পরিবেশ  দূষণ হয় না। মাসে মাসে বিদ্যুৎ বিলও দিতে হয় না। আবার এতে লোডশেডিংয়ের ঝামেলাও নেই। সৌর বিদ্যুৎ আপনার টাকা সঞ্চয় করতে পারে। প্রথমে পুরো ডিভাইস ক্রয় এবং পাঁচ থেকে সাত বছর পর পর ব্যাটারি পরিবর্তন বাবদ খরচ ছাড়া আর তেমন কোনো খরচ নেই। ৮৫ থেকে ১০০ ওয়াটের সোলার হোম সিস্টেম হলেই লাইট, ফ্যান ব্যবহার, টিভি দেখা এবং মোবাইল চার্জ অনায়াসেই দেয়া যায়। বর্তমানে শুধু  বাংলাদেশে নয় পুরো বিশ্বে সৌর বিদ্যুৎের চাহিদা বেড়েই চলছে। আমরা যদি উন্নত দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করি সেখানকার মানুষ কিন্তু পুরোপুরি সরকারিভাবে সরবরাহকৃত  বিদ্যুৎ এর উপর নির্ভর নয়। তারা নিজেদের চাহিদার প্রায় ৪০% বিদ্যুৎ নিজেদের সোলার সিস্টেম থেকে উৎপাদন করে এবং বাকি ৬০% বিদ্যুৎ সরকারি গ্রিড থেকে গ্রহন করে। এতে করে তাদের বিদ্যুৎ খরচ কমে যায়। বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুৎ এর চাহিদাও দিন দিন বেড়েই চলছে।
বর্তমানে শুধু বাংলাদেশেই প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৮০০০০(আশি হাজার) সোলার সিস্টেম বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সোলার হোম সিস্টেম রয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রায় ৮% মানুষ সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। গ্রামে সরকারিভাবে সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ বেশিরভাগ সময়েই থাকে না।

সুতরাং উপরের উল্লেখিত তথ্যসমূহ থেকে বুঝতেই পারছেন যে, সোলার প্যনেলের ব্যবসাটি খুবই লাভজনক এবং সম্ভাবনাময় একটি ব্যবসা।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সোলার প্যানেলের ব্যবসাটি গ্রামেই বেশি সুবিধাজনক যদিও বর্তমান সময়ে শহরাঞ্চলেও এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অত্যন্ত লাভজনক এ ব্যবসা শুরু করার পূর্বে আপনাকে সোলার প্যানেলের ইতিহাস এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে একটু পড়াশোনা করে নিতে হবে। একাডেমিক পড়াশোনা নয়। গুগলে একটু ঘাটাঘাটি করলেই মোটামুটি ধারণা হয়ে যাবে।
সোলার প্যানেলের ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে জানতে হবে যে মানুষ কি উদ্দেশ্য নিয়ে সোলার প্যানেল ক্রয় করে। সাধারনত সোলার প্যানেল ক্রয়ের উদ্দেশ্য দুইটি হয়ে থাকে। প্রথমটি হল যাদের ঘরে বিদ্যুৎ নেই তারা বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ার জন্য সোলার প্যানেল ক্রয় করে থাকে। আর দ্বিতীয়টি হল, বিদ্যুৎ আছে কিন্তু বিদ্যুৎ বিল কমানোর জন্য সোলার প্যানেল ক্রয় করে। এই দুই ধরনের মানুষদেরকেই আপনি গ্রাহক হিসেবে তৈরি করতে পারেন।
আপনি বিভিন্ন ভাবে এ লাভজনক ব্যবসাটি করতে পারেন। একটি হল আপনি পাইকারি ভাবে কয়েকটি সোলার ডিভাইস ক্রয় করে একটি ছোটোখাটো দোকান নিয়ে বিক্রি করতে পারেন। মানুষের চাহিদা এবং আপনার পছন্দমতো ভালো কয়েকটি  কোম্পানির সোলার ডিভাইস ক্রয়  করবেন। তারপর দোকানে সাজিয়ে খুচরো ভাবে বিক্রি করবেন। আপনার দোকানে শুধু সোলার ডিভাইস নয়, পাশাপাশি সোলার সিস্টেমে ব্যবহারের জন্য লাইট, ফ্যান, ব্যাটারি এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক পন্যও বিক্রি করতে পারেন।আপনার দোকানে সেলার পন্য কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তার নমুনা রাখবেন। আপনি প্রথম দিকে ১ লক্ষ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা দিয়ে এ ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এ ব্যবসাটি শুরু করতে কোন ক্ষেত্রে কত টাকা লাগতে পারে তার একটি হিসাব নিচে তুলে ধরছি.....
১.চারটি ছোটো আকারের  সোলার ডিভাইস - ৯০০০০ ৳
২.দোকানের এডভান্স - ২০০০০৳
৩. ফার্নিচার বাবদ - ২০০০০৳
৪.অন্যান্য ইলেকট্রনিক পন্য ক্রয় বাবদ- ২০০০০৳
৫.সরকারি লাইসেন্স ও অন্যান্য বাবদ -৮০০০৳
অর্থাৎ আমাদের ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা হলেই গ্রামে এ লাভজনক ব্যবসাটি শুরু করতে পারব। দোকান নেওয়ার ক্ষেত্রে দেখেশুনে নিবেন। মানুষের চলাচল বেশি এমন স্থানে দোকান নিবেন। আপনার দোকানের বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন। শুধু আপনার দোকানের বিজ্ঞাপন দিলেই হবে না, মানুষকে সোলার সিস্টেম ব্যবহারের উপকারিতাও বুঝাতে হবে। আর আপনার দোকানের গ্রাহক  বৃদ্ধির জন্য আরেকটি বুদ্ধি কাজে লাগাতে পারেন। সেটি হল আপনার দোকানে মোবাইল রিচার্জ এর ব্যবসা এবং বিকাশ, রকেট এবং নগদের ব্যবসাও চালু করতে পারেন। এটাও খুব লাভজনক একটি ব্যবসা। এতে করে আপনার কিছু অতিরিক্ত টাকা আয় হলো, পাশাপাশি আপনার বিজ্ঞাপনের কাজটিও হয়ে গেল। সোলার সিস্টেম ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে কিছু লিফলেট সংগ্রহে রাখতে পারেন। আপনাদের আশেপাশে যখন কেউ নতুন বাড়ি বা ঘর নির্মাণ করে তাদেরকে সোলার প্যানেলের উপকারিতা সম্পর্কে লিফলেট দিবেন। তাদেরকে বুঝাবেন যে সোলার সিস্টেম ব্যবহারে আপনার বিদ্যুৎ বিল অনেক কমে আসবে। এতে আপনার গ্রাহক বৃদ্ধি পাবে।
সোলার প্যানেলের ব্যবসার আরেকটি ধরন হচ্ছে কোনো সোলার ডিভাইস কোম্পানির ডিলার বা এজেন্ট হিসেবে ব্যবসা করা। অর্থাৎ কোনো কোম্পানির হয়ে নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে তাদের প্রতিনিধিত্ব করা। আপনি কোনো কোম্পানির ডিলার বা এজেন্ট হতে গেলে আপনাকে কোম্পানির সাথে কোনো চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হওয়া লাগতে পারে। সোলার ডিভাইস কোম্পানির ওয়েবসাইটে অথবা সরাসরি অফিসে গিয়ে আপনি ডিলারশিপের আবেদন করতে পারেন। গ্রাম অঞ্চলে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে আপনি কোনো সোলার ডিভাইস কোম্পানির ডিলার হতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে এলাকায় সোলার সিস্টেমের চাহিদার উপর ভিত্তি করে আপনার আয় হবে। কারণ চাহিদা বেশি হলে বিক্রি বেশি হবে। আর আপনি নিজেই এলাকায় চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারেন। বিজ্ঞাপন এবং সঠিক উপায়ে মানুষকে সোলার সিস্টেম ব্যবহারে উৎসাহিত করলে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এ ক্ষেত্রে আপনি মাসে ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা আয় করতে পারেন।

সোলার পন্যের ব্যবসা বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের জন্য দারুণ একটি ব্যবসার আইডিয়া। কারন উত্তরবঙ্গে সৌরবিদ্যুত এর চাহিদা বেশি।
এবার আসি সোলার সিস্টেমের উপর নির্ভর করে আরও এক ধরনের ব্যবসায়। এটি গ্রামে খুব লাভজনক একটি ব্যবসার আইডিয়া। শুধু তাই নয় এটা নতুন এক ধরনের ব্যবসার আইডিয়াও বটে।
এই ব্যবসার আইডিয়া বলার আগে কিছু তথ্য তুলে ধরছি..
যে সকল বাড়িতে সোলার সিস্টেম আছে তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ এর বড় একটি অংশ আব্যবহৃত থেকে যায়। কারও মতে এ অব্যবহৃত বিদ্যুৎ  এর পরিমান ঐ সিস্টেমের মোট উৎপাদিত বিদ্যুৎ এর ৩০%। সোলার প্যানেলে উৎপাদিত ব্যাটারির স্টোরেজে জমা হয়। কিন্তু ব্যাটারির স্টোরেজ পূর্ণ হয়ে গেলে সোলার প্যানেলে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আর জমা হয় না। আর এ অব্যবহৃত বিদ্যুৎ এর অপচয় বন্ধ করে তা থেকে অপরের বিদ্যুৎ এর চাহিদা পূরণ করেও টাকা আয় করা যায়। কিভাবে তা বলছি...
সোলবক্স ডিভাইস নামক একটি ডিভাইস রয়েছে। এই ডিভাইস দ্বারা আপনার সোলার প্যানেলের ব্যাটারির স্টোরেজ পূর্ণ হয়ে গেলে এরপর প্যানেলের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ছোটোখাটো একটি গ্রিডে যুক্ত হবে। এখানকার বিদ্যুৎ যাদের সোলার প্যানেল নেই তারাও ভোগ করতে পারবে। আপনার যদি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারনে ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যায়, আপনিও সেখান থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি সোলবক্স ডিভাইস ব্যবহার করে এ ব্যবসা করতে পারেন। এক্ষেত্রে যাদের থেকে বিদ্যুৎ নিবেন তাদেরকে আপনি তাদের বিদ্যুৎ বিক্রয় করে যে অর্থ পাবেন তার একটি অংশ দিবেন। এতে সকলেরই আয় হবে এবং আগ্রহ বাড়বে। বর্তমানে সোলশেয়ার নামক একটি প্রতিষ্ঠান এ ব্যবসা করে ভালো নাম কুড়িয়েছে।

সবশেষে বলব যে ব্যবসায় উন্নতি পেতে চাইলে মানের দিকে খেয়াল রাখবেন। সোলার ডিভাইস বিক্রি করলে খারাপ মানের ডিভাইস গ্রাহকদেরকে বুঝিয়ে দিবেন না। আপনি যদি সবসময় ভালো মানের পন্য বা সেবা দিতে পারেন তাহলে সর্বশেষে আপনিই বাজারে টিকে থাকতে পারবেন। যদিও এতে দাম একটু বেশি পড়বে। আর এ সম্ভাবনাময় ব্যবসাটি শুধু গ্রামে নয় শহরেও খুব জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

আজকের আলোচনা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।
ধন্যবাদ।


Related Post

জনপ্রিয় পণ্য

সাম্প্রতিক পণ্য

Leave a Comment:
alibaba & Import Export expert

সি এন্ড এফ, আমদানি, আলিবাবা নিয়ে যেকোনো সমস্যায় আমাকে ফেসবুকে মেসেজ করুন

এখানে ক্লিক করুন
2017 © 2024 eibbuy. All Rights Reserved.
Developed By Fluttertune react js next js